পাকা কলা- পাকা কলা এমন একটি পুষ্টিকর ফল যা সারা বছর ধরেই নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। সবরি, মর্তমান, সাগর, চাঁপা - সব পাকা কলাই কমবেশি সমান পুষ্টিকর। শরীরে শক্তি জোগাতে কলা অত্যন্ত উপাদেয় একটি ফল। পাকা কলাতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ যেমন- পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ফোলেট, নিয়াসিন, রিবোফ্লাভিন ও ভিটামিন-বি রয়েছে। এগুলি শরীরকে কর্মক্ষম ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। পাকা কলা সাধারনত টাটকা ফল হিসাবে খাওয়া হয়। খুব সামান্য পরিমানে কলা প্রক্রিয়াজাত করা হয়। বাংলাদেশে পিঠা তৈরিতে কলা ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও আইসক্রিম তৈরিতে কলা ব্যবহার করা হয়। সর্বোপরি পাকা কলাই একমাত্র ফল যা দেশের ধনী-দরিদ্র সকলেই কমবেশী খাওয়ার সুযোগ পায়।
তবে একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে, পাকা কলা খেলে ঠান্ডা লাগে। তাই অনেক সময় আমরা শিশুদেরকে পাকা কলা খেতে দেই না বা নিজেরাও পাকা কলা খাওয়া এড়িয়ে যায়। শীতের সময় পাকা কলা খাওয়া উচিৎ কিনা, তা নিয়ে নানা জনের নানা মত রয়েছে। আসলেই বিষয়টি কতটুকু সঠিক?
চিকিতসকদের মতে পাকা কলা খেলে ঠান্ডা লাগে—এ ধারণা একেবারেই সঠিক নয়। পাকা কলা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তবে যারা ঠান্ডার সমস্যায় ভুগছেন বা যাদের অ্যাজমা, নাকে পানি ঝরা, হাঁচি বিভিন্ন অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে পাকা কলা খেলে সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে পাকা কলা খেলে মিউকাস বেশি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ঠান্ডার বা অ্যালার্জির রোগীকে এটি খেতে মানা করা হয়। পাকা কলা স্বাস্থ্যকর ও শক্তিবর্ধনকারী খাবার। তবে আপনার যদি সর্দি বা শ্বাসকষ্ট জনিত অসুস্থতা থেকে থাকে, তাহলে শীতকালে রাতে এটি খাবেন না বা দিনের বেলাতেও খুব বেশি পাকা কলা খাবেন না। অন্যথায় শীতের রাতেও পাকা কলা খেতে কোনো সমস্যা নেই।
যাদের সাধারণ ঠাণ্ডা ও সাইনাসের মতো শ্বাসকষ্টজনিত অসুখ রয়েছে, তাদের খুব বেশি পাকা কলা না খাওয়াই ভালো। তবে শীতকালে সম্পূর্ণভাবে পাকা কলা খাওয়া বন্ধ করে দেয়া উচিত নয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবাই পাকা কলা নির্ভয়ে খেতে পারেন।
চলুন জেনে নিই, শীতকালেও কেন পাকা কলা খাবেন-
নাম্বার ১- শীতের সময় হাড়ের সমস্যা বাড়তে পারে। পাকা কলাতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে যা শুধু হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে সহায়তা করে না একইসঙ্গে হাড় শক্তিশালী করে তোলে।
নাম্বার ২-
পাকা কলা খেলে তা হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপ প্রতিরোধেও সহায়তা করতে পারে। পাকা কলার মতো উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। পাকা কলাতে থাকা পটাসিয়াম হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং মস্তিষ্ককে সজাগ রাখতে সাহায্য করে।
নাম্বার ৩-
অনেকেই গভীর রাতে মিষ্টি খাওয়ার প্রবনতা থাকে । একে বলা হয়- লেট নাইট ক্র্যাভিং। চিনিযুক্ত খাবারের অনেক রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। তবে এটি এড়ানোর জন্য পাকা কলা একটি কার্যকরী সমাধান। এতে প্রাকৃতিক চিনি এবং উচ্চ মাত্রায় ক্যালোরি থাকে। ফলে রাতের এই তৃষ্ণা মেটাতে পাকা কলা যথেষ্ট কাজ দেয় এবং একইসঙ্গে এতে ভিটামিন ও ফাইবারের পরিমাণও বেশি।
নাম্বার ৪-
সন্ধ্যায় জিম বা শরীরচর্চা করার পরে পাকা কলা খাওয়া ভালো অভ্যাস। এটি পটাসিয়াম সমৃদ্ধ, তাই ক্লান্তির শেষে এটি আপনাকে পেশী শিথিল করতে সাহায্য করবে। সন্ধ্যার পরে একটি বা দুটি পাকা কলা খাওয়ার অভ্যাস আপনাকে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করবে।
সতর্কতা-
যতোই ভাল হোক না কেন লোভে পড়ে বেশি পাকা কলা খেয়ে ফেলবেন না যেন। উপকারের মতো বেশি পাকা কলা খেলে ক্ষতির সম্ভাবনাও কিন্তু থাকে।
নাম্বার ১- মাঝারি মাপের একটি পাকা কলায় ১০৫ ক্যালোরি খাদ্যশক্তি থাকে। তাই বেশি কলা খেলে ওজন বৃদ্ধির পায়।
নাম্বার ২- কারও যদি মাইগ্রেনের সমস্যা থাকে তাহলে তাদের যতটা সম্ভব পাকা কলা এড়িয়ে চলা উচিত। কলায় টাইরামাইন নামে এক ধরনের উপাদান থাকে যা মাইগ্রেনের কারণ।
নাম্বার ৩- রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে হাইপারক্যালেমিয়া রোগ হয়। এই রোগে আক্রান্তরা সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন, হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন অনিয়মিত হয়ে থাকে। পাকা কলায় পটাশিয়াম থাকায় বেশি খেলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
নাম্বার ৪- প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকায় বেশি পাকা কলা খেলে দাঁতের ক্ষতি হয়। এমনকী দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য কলা চকোলেটের থেকেও বেশি ক্ষতিকর।
নাম্বার ৫- ভিটামিন বি৬ বেশি খাওয়ার প্রভাবে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয়ে থাকে। পাকা কলায় এই ভিটামিনের আধিক্য আছে তাই খুব বেশি কলা খাওয়া উচিত নয়।
নাম্বার ৬-পাকা কলা অনেক সময়ই অ্যালার্জির কারণ হয়ে থাকে, ঠোঁট ফুলে যায়, গলা জ্বালা করে। যাদের অ্যালার্জির প্রবলেম তারা কলা এড়িয়ে চলবেন।
0 Comments